শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব এই সম্পর্কে অনেকের সঠিক তথ্য জানা থাকে না। শীতকালে ত্বকের সঠিক যত্ন না নিলে আমাদের ত্বক অনেক শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়। এই রুক্ষ এবং শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব

শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়া। আজ আমরা আলোচনা করব শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব। বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের পোস্টটি ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব 

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব 

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব তার জন্য প্রথমে আমাদের যে বিষয় জানতে হবে তা হল ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার খুবই জরুরী। ত্বকের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে শীতকালে আমাদের ত্বক অনেক ভালো থাকে। গোসল করার পর ও মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক অনেক ভালো থাকে। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ঘুমালে আমাদের ত্বক অনেক সতেজ থাকে।

শরীর এবং মুখ ধোয়ার সময় গরম পানি এড়িয়ে চলতে হবে। গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বক আরো শুষ্ক এবং খারাপ হতে থাকে। সব সময় চেষ্টা করতে হবে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা। বাহিরে যাওয়ার আগে অবশ্যই স্কিনকেয়ার ব্যবহার করতে হবে কারণ শীতকালে সূর্যের রশ্মি ত্বকের আদ্রতা নষ্ট করে দেয়। শীতকালে পানি পিপাসা কম লাগলেও দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

শীতকালে শুষ্ক ত্বকের যত্ন 

শীতকালের শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা অনেকেই দেখতে পাই। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা অনেক কম থাকায় আমাদের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়। শীতকালে ত্বকের কিছু যত্ন নেওয়ার ফলে আমাদের ত্বক অনেক ভালো থাকে। কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শীতকালে শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা নিচে আলোচনা করা হলো:

নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা: শীতকালের নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক অনেক ভালো দেখায়। রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্লিসারিন বা হাইড্রেটিং যুক্ত ময়েশ্চারাইজার শীতকালে ব্যবহারের জন্য বেশ উপযোগী। এইগুলো ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং অনেক সময় ধরে ত্বক শুষ্ক রাখে।

আরো পড়ুনঃশীতকালে মধু খাওয়ার ৫টি উপকার

ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা: শীতকালে নিয়মিত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। কোনভাবেই গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না কারণ গরম পানি ব্যবহার করলে আমাদের শরীরের চামড়া রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। যদি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে না পারেন তাহলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। গোসল করার সময় সাবান বা ফেসওয়াশ জেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন 

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব

শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক মা সঠিকভাবে তাদের বাচ্চাদের ত্বকে যত্ন নিতে পারে না। শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন না নেওয়ার ফলে বাচ্চাদের ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক দেখায়। কিছু কিছু কার্যকরী উপায় ব্যবহার করে বাচ্চাদের যত্ন নেয়া যেতে পারে। যেমন: 

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের আদ্রতা অনেক কমে যায় ফলে বাচ্চাদের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে বাচ্চাদের ত্বক নরম ও মসৃণ দেখায়। বাচ্চাদের জন্য বেবি ময়েশ্চারাইজার গুলো ব্যবহার করতে হবে।

সুষম খাবার গ্রহণ: শীতকালে বাচ্চাদের জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেলে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য এবং ত্বক ভালো থাকে। বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। এ ধরনের খাবারে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল বাচ্চাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। 

শীতকালে ছেলেদের ত্বকের যত্ন 

শীতকালে ছেলেদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখা উচিত। বিশেষ করে শীতকালে ছেলেদের ত্বকের যত্ন নেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। শীতের শুষ্ক হওয়া এবং তীব্র ঠান্ডা শরীরের আর্দ্রতা কেড়ে নেয় যার ফলে ত্বক অনেক খসখসে এবং প্রাণহীন হয়ে পড়ে। সঠিক যত্ন নেওয়ার ফলে এই রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বক নমনীয় এবং কমল রাখা সম্ভব।

শীতকালে ছেলেদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয় সবার প্রথমে আসে তা হল নিয়মিত ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার করা। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার অপরিহার্য। শীতকালে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত যা ত্বকের গভীরে গিয়ে ত্বক সতেজ ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য গ্লিসারিন এবং লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

ত্বকের যত্নে লিপ বাম এবং সানস্ক্রিন অবহেলা করা উচিত নয়। অনেকেই মনে করেন শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা একটি ভুল ধারণা। শীতকালে সূর্যের রশ্মি ত্বকের উপর পড়ার ফলে ত্বকের স্কিন অনেক খসখসে হয়ে পড়ে। যার কারনে শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। শীতকালে ছেলেদের ত্বকের যত্নে অতিরিক্ত কিছু টিপস মেনে চললে তখন অনেক সতেজ থাকে। প্রতিদিন রাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর কিছুক্ষণ ত্বক মেসেজ করলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় যা ত্বকের জন্য উপযোগী।

শীতকালে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন 

শীতকালে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শীতকালে প্রায় মানুষের শরীরে তৈলাক্ত ভাব লক্ষ্য করা যায়। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের আদ্রতা কমিয়ে দেয় এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব বেড়ে যায়। শীতকালে ত্বক ময়েশ্চারাইজার হারিয়ে ফেলার ফলে ত্বকের আদ্রতা বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে। যার ফলে ত্বকে ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অতিরিক্ত বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 

শীতকালে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য সবসময় মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রাখতে হবে। দিনে দুই থেকে তিনবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত। উচ্চমানের ফেসওয়াশ ব্যবহার না করে তৈলাক্ত দূর করে এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল দেখাবে এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে। আবার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন-টমেটোর রস, মধু, অ্যালোভেরা ইত্যাদি।

শীতকালে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া টিপস 

শীতকালে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া টিপস ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা সহজেই ঘরে বসে শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক কিছু তৈরি করে ফেলতে পারি। শীতকালে ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা কমে যাওয়ার ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়। ঘরোয়া কিছু টিপস ব্যবহার করে এইসব সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। যেমন-

মধুর মিশ্রণ: মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়লে নিয়মিত মধুর ব্যবহার করা যেতে পারে। 

নারকেল তেল: প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। গোসলের আগে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে হালকা নারকেল তেল শরীরে মেসেজ করে নিলে ত্বক শুষ্ক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। 

আরো পড়ুনঃমোটা হওয়ার উপায়

দুধ ও মধুর মিশ্রণ: দুধ ও মধুর মিশ্রণ ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে চমৎকার ভূমিকা পালন করে। দুধ ও মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয়ে যায়। 

গ্লিসারিন ও গোলাপজল: গ্লিসারিন ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বক কোমল রাখে ও ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। 

ফেস মাস্ক: ঘরে বসে ফেস মাস্ক তৈরি করে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। একটি কলা চটকে এর মধ্যে মধু এবং দই মিশিয়ে একটি ফেস মাস্ক তৈরি করা যায়। তারপর এটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। 

এইভাবে ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজে শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব। শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া সবার আগে জরুরী। 

শীতকালে ত্বকের সমস্যার সমাধান 

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব

শীতকালে ত্বকের সমস্যা সমাধান সবাই করতে চাই, কিন্তু সঠিক উপায় সবার জানা থাকে না, যার ফলে প্রায় সবার ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়। শীতকালে ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরী সমাধান মেনে চললেই রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন-

ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার: শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের আদ্রতা শুষে নাই। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন গোসল করার পর এটি ব্যবহার করা উত্তম।

ঠোঁট ফাটা: শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি কমন সমস্যা যা সবার দেখা দেয়। এই ঠোঁটকে মসৃণ রাখতে প্রতিদিন ভালো মানের লিভ জেল ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ঘরোয়া উপায়ে ঠোঁটে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ত্বকের চুলকানি: শীতের শুষ্কতা ত্বকের চুলকানি বৃদ্ধি করতে পারে। এই চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত। এছাড়া চুলকানি কমাতে গোলাপজল এবং গ্লিসারিনের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

পায়ের গোড়ালি ফাটা: শীতকালে পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যা প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এই সমস্যার সমাধানের রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে হালকা করে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল লাগিয়ে মেসেজ করা যেতে পারে। এতে করে পায়ের শুষ্কতা দূর হবে এবং গোড়ালি মসৃণ থাকবে।

চুলের রুক্ষতা: শীতকালে চুল অনেক রুক্ষ হয় এবং চুল অনেক ঝরে পড়ে। চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে সপ্তাহে এক থেকে দুই বার নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল দিয়ে মেসেজ করতে হবে। এছাড়া চুলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল মসৃণ থাকে।

শেষ কথা 

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব এ বিষয়ে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম ও বুঝতে পারলাম। শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া সবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে সবার ত্বক অনেক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে পড়ে। সঠিকভাবে যত্ন নেয়ার ফলে এই শুষ্ক এবং রুক্ষ ত্বক সতেজ রাখা সম্ভব। 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই বোঝা যায় যে শীতকালে ছেলে-মেয়ে শিশু-বৃদ্ধ সবার ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কৃপণতা করা উচিত হবে না। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইনফোবিডি আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url